আশিকুর রহমান হৃদয়:
“নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ” শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুরে অনুষ্ঠিত হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ গোল টেবিল বৈঠক। ক্ষুদ্র উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাত মৎস্যপূর্ণ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়কে প্রতিপাদ্য রেখে এই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার এসডিএস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এই বৈঠকে জেলার মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এসডিএস এর মাইক্রো ফাইন্যান্স পরিচালক কামরুল হাসান বাদলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কাশেম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিসারিজ এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল,সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা,নড়িয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন,ভেদেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল ইমরান,সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন,এসডিএস সমন্বয়কারী কৃষি মোঃ সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়নে ছিল এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি), সহযোগিতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), এবং অর্থায়নে ইফাদ ও ডেনমার্ক দূতাবাস।
এসময় এসডিএস এর প্রজেক্ট ম্যানেজার জাকির হোসাইনের এর স্লাইড প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে ভ্যালু চেইন প্রজেক্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, এসময় তিনি বলেন, আমরা আমাদের ৯৫ শতাংশ কর্মকান্ড ইতিমধ্যে শেষ করতে সমর্থ হয়ে। বাকি ৫ শতাংশ কাজ ডিসেম্বর এর মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিরাপদ এবং লাভজনক মৎস্য চাষের জন্য, আমরা ফার্ম মেকানাইজেশন এবং স্মার্ট অ্যাকুয়াকালচার সলিউশনসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি মৎস্যজীবীদের মধ্যে। তাছাড়া দ্রুত বর্ধনশীল মাছ ও গলদা চিংড়ির পিএল নার্সিং এর সহযোগিতা আমরা প্রদান করেছি।
মৎস্য খামার পুকুর ও হ্যাচারি পানির গুনাগুন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ আইও টি প্রযুক্তি স্থাপন করেছি। যার জন্য মৎস্য চাষিরা খুব সহজেই পুকুরের পানির গুনাগুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন। কিছু খামারীদের জন্য আমরা প্রোবায়োটিক প্রদর্শনীও রেখেছি। আমরা এই ধরনের নানান পদক্ষেপ নিয়েছি মৎস্য খামারীদের জন্য। দেশ যেহেতু ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও উৎপাদনকারীদের ব্যবসা প্রসারের জন্য আমরা ফেসবুক অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বুস্টিং এর একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যার কারনে তাদের ব্যবসার পরিচিতির পাশাপাশি প্রসার হয়েছে। তাছাড়া জনসাধারণের বিনোদনের জন্য আমরা ফিশারিজ বেইজড ইকো ট্যুরিজমের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছের ঘেরে ভাসমান রেস্টুরেন্ট নৌকা ভ্রমণ বিনোদনমূলক ফিশিং সহ ইত্যাদি কর্মকান্ড। পাশাপাশি শরীয়তপুরে উচ্চ মূল্য মানের দেশীয় প্রজাতির মাছের হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে একই সাথে স্থানীয় পর্যায়ে মৎস্য সেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যার কারণে মৎস্যজনিত যেকোনো পরামর্শ যেকোনো সময় তারা নিতে পারেন।
পানির গুনাগুন পর্যবেক্ষণের IOT প্রযুক্তি গ্রহণকারী মৎস্য খামারি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এই প্রযুক্তি নেওয়ার পর আমার একটি মাছও মারা যায়নি। আগে থেকে আমার মাছের উৎপাদনও বেড়েছে। পূর্বে অনেক মাছ মারা যেত, মাছ মারা যাওয়ার পরেও আমি আগে ৩৫ লক্ষ টাকা লাভ করেছি। কিন্তু এইবার এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কোন মাছ না মারা যাওয়াতে আমি এবার ১০ লক্ষ টাকা বেশি লাভ করেছি। এখন আমি আমার অ্যাপসের মাধ্যমেই জানতে পারি আমার মৎস্য খামারের পানির এবং অন্যান্য পরিস্থিতি।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: আবুল কাশেম বলেন, নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য উৎপন্ন উৎপাদন এবং তা বাজারজাতকরণে র ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি মৎস্য খামারি এবং মৎস্য উদ্যোক্তাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি সহায়ক। বিশেষ করে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি ভোক্তা তৈরি করতে হবে। একমাত্র মাছ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ প্রোটিন। ভোক্তাদেরকে মাছের পুষ্টির বিষয়ে জানাতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট রেস্তোরাঁ গুলোতে মাছ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করতে হবে। যার কারনে ভোক্তা বাড়বে। মৎস খামারি এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়বে। আর পাশাপাশি এই মুহূর্তে শরীয়তপুরে পুনঃউৎপাদনের জন্য একটি হ্যাচারি প্রয়োজন। তবে একটা বিষয় দুঃখজনক গোসারহাটে আমাদের উৎপাদনের জন্য একটি হ্যাচারিও করা হয়েছিল। নানান জটিলতার কারণে সেটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। সুস্থ মৎস্য উৎপাদনের জন্য সুস্থ রেনুপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বৈঠক শেষে সভাপতির বক্তব্যে এসডিএস মাইক্রো ফাইনান্স পরিচালক কামরুল হাসান বাদল, গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকৃত সকলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন আমাদের পরিকল্পনা ছিল মুক্ত আলোচনা। আজকে আমাদের গোলটেবিল বৈঠকে সকলের অংশগ্রহণ দেখে মনে হয়েছে আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটি সফল হয়েছে। এখন যদি সকলে মিলে আমরা আজকের প্রোগ্রামের সুফলকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমাদের প্রোগ্রামের সফলতা আসবে।
Facebook Comments