শরীয়তপুরে জাজিরা থানা ওসি’র মৃত্যুতে ৩ সদস্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন

সানজিদ মাহমুদ সুজনঃ

শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের। আত্মহত্যার ঘটনায় নিহতর ভাই আবুল কালাম বাদি হয়ে জাজিরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।

এছাড়া তিন সদস্য অনুসন্ধান কমিটি করেছে পুলিশ সুপার। ঢাকা মেডিকেলে আল-আমিনের ময়নাতদন্ত হয়েছে।

শুক্রবার বিকেল ৫টার শরীয়তপুর পুলিশ লাইনস মাঠে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নেয়া হয়েছে। তবে ওসির মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তদন্ত চায় পরিবার ও সুশীল সমাজের লোকজন।

 

নিহত ওসি আল-আমিনের বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদি থানার কাঁচিচর এলাকায়।

 

 

পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান থানার চারতলা ভবনের দোতলায় ওসির শয়ন কক্ষে জানালার সঙ্গে আল-আমিনের মরদেহ ঝুলছে। পরে ঢাকা সিআইডি ফরেনসিক টিম এসে সুরতহাল শেষ করে সন্ধ্যার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ ও পরিবার বলছে গত দুই বছর যাবত তিনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

 

গেল বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন আল-আমিন। প্রায় চার মাস যাবত ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এরআগে তিনি বরগুনা জেলার গাজিপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

সেলিম মাদবরসহ স্থানীয়রা জানান, ওসি মারা গেছে ফেসবুকে দেখে হতভাগ হয়ে গেছি। থানার ওসি মারা যাবে এটা অবিশ্বাস্য। পারিবারিক সমস্যায় নাকি অন্যকোন কারণে মারা গেছেন জানতে চান স্থানীয় লোকজন।

অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট মৃধা নজরুলসহ সুশীল সমাজের লোকজন বলেন, এটা হত্যাকান্ড নাকি আত্মহত্যা এই বিষয়টা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দেখা উচিৎ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাচাই-বাঁচাই করে দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন সুশীল সমাজের লোকজন।

 

নিহত ওসি আল-আমিনের ভাই আবুল কালাম বলেন, ভাই‘র মৃত্যুতে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। হয়তো তাঁর কোন কাজের চাপ ছিল বা সিনিয়রের চাপ ছিল এজন্যই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
এছাড়া থানার কাজের প্রেশার নিয়েও চিন্তা করতে দেখেছি ভাইকে। আমার জানামতে পারিবারিক কোন চাপ ছিল না। ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই।

 

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখা সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জেলা পুলিশ ও নিহত ওসির পরিবার জানিয়েছেন তিনি দুই বছর যাবত ডিপ্রেশনে ভুগছেন। যে ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত ডিপ্রেশনে ভুগছেন তাকে কি করে একটি থানার দায়িত্বশীল অবস্থায় রাখা হয়? পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁর সম্পর্কে জানতেন বা খোঁজ খবর নিতেন, তাহলে হয়তো তাঁর মৃত্যু হতো না। এমন কিছু হতে পারে আমার ধারণা- এতোবড় দায়িত্ব তিনি সামলাতে পারছেন না, অথবা এই দায়িত্ব তাঁর মন মত হয়নি। আমি মনে করি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন কর্মকর্তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে, তাঁর শারীরিক ও মানষিক দিকগুলো জানা অতি জরুরি।

শরীয়তপুর পুলিশ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওসি আল-আমিনের মরদেহ ঝুলে আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাস্থলে কিছু ঔষধ পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করা হয় ডিপ্রেশন ও মানষিক সমস্যার জন্য।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ব্রেইন ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসির খান বলেন, বেশির ভাগ সময় মন খারাপ, কাজ ভালো লাগে না, আগ্রহ নেই, খাওয়া-দাওয়ায় বেশি বা কম, জিনে সমস্যা দেখা দেয়া, ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়া, নিজেকে কম মূল্যায়ণ মনে হয়, আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসাসহ এমন ৯টি লক্ষণ হলে বুঝতে হবে ডিপ্রেশন। এই লক্ষণের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আত্মহত্যা করছে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ডিপ্রেশনের বিষয়টি গোপনে রাখা হয়েছিল, পরবর্তীতে পরিবার থেকে জানা গেল তিনি ডিপ্রেশনে ভূগছিলেন। ওসির মৃত্যুতে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এছাড়াও তিন সদস্য একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে বলে জানান এসপি।

Facebook Comments

About T. M. Golam Mostafa

Check Also

দৈনিক গনমুক্তি পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

আজকের শরীয়তপুর প্রতিবেদক: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে দৈনিক গনমুক্তি পত্রিকার ৫২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী …

কপি না করার জন্য ধন্যবাদ।