আশিকুর রহমান হৃদয়ঃ
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই সাংবাদিক সহ তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বাদী হয়ে আহত সাংবাদিক সোহেল রানা ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ডামুড্যা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে গত বুধবার ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- স্থানীয় সাপ্তাহিক বার্তা বাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সোহেল রানা (৩৬), আলোর জগৎ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাহাবুব তালুকদার (৩৫) ও পলাশ ( ৪০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের সিরাজ বেপারী ও একই গ্রামের নাছির লাহরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত বুধবার বিকেলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নাছির লাহরী সাংবাদিক সোহেল রানার মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ জমি নিয়ে করা মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি তার মা ওই সাংবাদিককে জানালে তিনি পেশাগত কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে টিএনটি এলাকায় পৌছালে দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের আলী বক্স মাদবরের ছেলে সিদ্দিক মাদবর (৫৫), জাকির মাদবর(২৫), নুর বক্স লাহরীর ছেলে নাছির লাহরী(৩৬), নেছার লাহরী(৩৫), ইয়ামিন লাহরীসহ (২৭) অজ্ঞাত ১০-১২ জন ব্যক্তি সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
এসময় তার সাথে থাকা সহকর্মী সাংবাদিক মাহাবুব তালুকদার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাকেও মারধর করে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা। ঘটনার খবর পেয়ে সোহেল রানার বোন জামাই পলাশ তাদের উদ্ধার করতে আসলে তাকেও মারধর করে তারা। এরপর ওই সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাংচুরসহ তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহত দুই সাংবাদিক কে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ডামুড্যা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমাদের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করা দরকার। না হলে এই ধরনের হামলার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটবে।
হামলায় আহত সাংবাদিক সোহেল রানা বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সিদ্দিক মাদবর সন্ত্রাসী বাহিনী এনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। সিদ্দিক মাদবর, জাকির মাদবর, নাছির লাহরী, নেছার লাহরী, ইয়ামিন লাহরী সহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠি-সোটা ও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের উপর হামলা করে। ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। আমি ন্যায় বিচার আশা করছি।
আহত আরেক সাংবাদিক মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি এবং সাংবাদিক সোহেল রানা একসাথে তাদের বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলাম। এসময় ডামুড্যা টি.এন.টি এলাকায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের মোটরসাইকেল গতিরোধ করে হামলা চালানো হয়। সোহেল রানা, তার বোন জামাই পলাশ ও আমাকে তারা পিটিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত সিদ্দিক মাদবরের বাড়ীতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় নি। তাকে মোবাইল ফোনে ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ডামুড্যা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Facebook Comments