ইরিনা ইসলাম শিলা:
প্রচন্ড স্পৃহা, সীমাহীন মেধা থাকলে এবং নিয়মিত অনুশীলন করলে সফলতার ষোলকলা পূর্ণ করা যায় তা প্রমাণ করলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় সদ্য যোগদানকৃত সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা।
বরিশালের পিরোজপুরের মেয়ে ফারজানা বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সফলতার সঙ্গে এস. এস. সি ও এইচ. এস. সি সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
ছোটবেলা থেকেই ফারজানার ইচ্ছে ছিল বি. সি. এস কর্মকর্তা হওয়ার। তাই এইচ. এস. সি পাশের পর সুযোগ এবং সাধ্য থাকার পরও মেডিকেল ভর্তি হওয়া হলোনা তার। যদিও পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল ফারজানা ডাক্তার হবে। এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স দ্বিতীয় বিভাগে পড়াশোনার সময় হঠাৎ মাত্র উনিশ বছর বয়সে হুট করে বিয়ে হয়ে যায় ফারজানার।
এ সময় তার পড়াশোনা ব্যাহত হয়। অদম্য ইচ্ছে থাকার পরও সংসার সামলিয়ে পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে ফারজানার। এর উপর মাস্টার্স ফাইনাল এর সময় গর্ভে সন্তান আসে তার। তদুপরি সবকিছু সামাল দিয়ে প্রচন্ড মনোবল নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান ফারজানা। কিন্তু মাঝখান থেকে অনিবার্য কারণে ৪টি বছর ঝড়ে যায় তার জীবন থেকে। সবকিছু উতরিয়ে বি. সি. এস ক্যাডার হওয়ার অদম্য লালিত ইচ্ছা তার থেকেই যায়। সে প্রেরণা থেকেই তিনি নতুন করে লেখাপড়া শুরু করেন নব উদ্যমে। কিন্তু দূর্যোগ কখনো তার পিছু ছাড়েনি। ৩৭ তম বি. সি. এস প্রিলিমিনারী আবেদন করার পর পরীক্ষার সময় জলবসন্তে আক্রান্ত হন তিনি। এ দূরাবস্থা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর দিন-রাত পড়াশোনা করে বি. সি. এস ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এর মাধ্যমে পূরণ হয় উম্মে হাবিবা ফারজানার স্বপ্ন। যদিও তাকে নিয়ে কেউ আশাবাদী ছিলেন না। এরপর পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ী ও স্বামী তাকে সহযোগিতা প্রদান করেছেন। যে কারণেই সাফল্যের সোনার হরিণ ধরা দিয়েছে তার কাছে। যদি এর পেছনে তার নিজের প্রচন্ড স্পৃহা, সীমাহীন মেধা ও নিয়মিত অনুশীলন দারুণভাবে কাজ করেছেন।
বিগত জানুয়ারী ২০২৩ এ তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন সিরাজদিখান উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। কাজে যোগদান করেই ফারজানা সাধারণ মানুষের সেবা সহজ সাধ্য ও তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নেন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, দীর্ঘদিনের জমাটবাঁধা সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করে ফারজানা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তার নেতৃত্বে সিরাজদিখান উপজেলার ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এখন সর্বজন বিদিত। এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের দৈনন্দিন ভূমি সংক্রান্ত নানা সমস্যা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
সততা, দক্ষতা, একাগ্রতার সাথে শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে উম্মে হাবিবা ফারজানা তার দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন আদর্শ কর্মকর্তার মাঝে যেসব গুণাবলী থাকা আবশ্যক উম্মে হাবিবা ফারজানার মাঝে তা সম্পূর্ণ বিদ্যমান। তার মাধ্যমে আগামী দিনে ব্যাপক জনকল্যাণকর কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহজতর হবে।
Facebook Comments