সখিপুরে রাস্তার বেহাল দশা, চরম ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী

রায়েজুল আলম:

 

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের আলী বেপারীর বাড়ি হইতে নরসিংহপুর আবুল শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তার আবস্থা খুবই বেহাল দশা ৷ এ রাস্তা দিয়ে স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ ৮টি কান্দির দৈনিক প্রায় ৫হাজার লোকের যাতায়াত। সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রাস্তাটি। বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা-পানির সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ও মাটি মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায় পুরো রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েন ওই এলাকার শত শত মানুষ। দীর্ঘ এত বছরেও কাচাঁ রাস্তাাটিতে ইটের ছোঁয়া না লাগায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের খায়েরপট্টি আলী বেপারীর বাড়ি হইতে নরসিংহপুর আবুল শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তাটি প্রায় ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো পথের ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়েই চলাচল করতে হয় স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রী,বৃদ্ধসহ সব শ্রেণি পেশার লোকজন।

বছরের বেশিরভাগ সময়েই ভোগান্তির শিকার হতে হয় গ্রামবাসীর। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। এই এলাকার মানুষের আতংক ও ভয়ের আরেক নাম বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে হাঁটু সমান কাদা । এ রাস্তায় কাদার জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভ্যান-রিক্সা ঢোকে না। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে তো দূরে থাক, খালি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দায়। বৃষ্টির দিনে গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সও এখানে ঢুকতে পারে না। অনেক সময় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঁধে করে কর্দমাক্ত রাস্তা পার করা হয় ।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মিজান সিকদার বলেন, আমাদের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষিপণ্য সময়মতো বিক্রি করতে পারি না ।

আমাদের ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যায়। বিশেষ করে বৃষ্টি-কাদার দিনে জুতা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আর কত কাল এ কষ্ট করতে হবে কে জানে ।এলাকায় প্রচুর কৃষি ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা সময় মতো পণ্য বাজারজাত করতে পারেন না। ফলে সফলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কি করে চলাচল করব আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। পরীক্ষার সময় এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে হয়। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল হয়নি। তাদের কাছে অনুরোধ আমাদের এই রাস্তার দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সবাই মিলে একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ বিভিন্ন জনের কাছে কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো কাজ করেননি। তাই ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা বেপারি বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। এছাড়াও পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি নিতে হয়। এই রাস্তা দিয়েই কৃষি পণ্য বাজারজাত করা হয়। আমাদের এ কষ্ট কবে দূর হবে তার কোনো ঠিক নেই ৷

স্থানীয় দারুসসুন্নাত ছালেহীয়া দানীয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ এরশাদ আলী বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। জরুরি সেবার কোনো গাড়ি বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। হিন্দু বা মুসলিম কেউ মারা গেলে কাঁদার কারণে সৎকার, দাফন- কাফনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই । অতি প্রাচীন রাস্তাটি পাকাকরণ এখন সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ শাহজাহান বেপারী বলেন, রাস্তাটির স্কিম দেওয়া হয়েছে । আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এর একটা সমাধান হবে ।

চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার নির্বাচনী ইস্তেহার ছিলো এই রাস্তাটি করে দেওয়া। তবে এখনো করে দিতে পারিনি। রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় দীর্ঘদিন দূর্ভোগে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী এই রাস্তা দিয়েই মাঠ থেকে জমির ফসল ঘরে তোলেন। এ ছাড়াও স্থানীয় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রী কেনাকাটা করতে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীকে। জনদূর্ভোগ ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে রাড়াটি পাকা করা প্রয়োজন। তিনি রাস্তাটি পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষপ কামনা করেন।

Facebook Comments

About T. M. Golam Mostafa

Check Also

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মো: রায়েজুল আলম // শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। …

কপি না করার জন্য ধন্যবাদ।