সম্পাদকীয়

স্বাধীনতার সুখ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক

টি.এম. গোলাম মোস্তফা

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এ দিনে চির অবহেলিত বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে পশ্চিমা পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দ্বি-জাতি তত্বের ফর্মূলায় পাক-ভারত  উপমহাদেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান নামীয় রাষ্ট্রের আবির্ভাব হয়। যে চেতনায় পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল, পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাক শাসকরা তা বাস্তবায়ন না করে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। তারা কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন-শোষণ করে শ্মশানে পরিনত করে। দ্বি-জাতি তত্বের স্লোগানে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলেও তা ভূলন্ঠিত হয়। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান ভৌগলিকভাবে সূচনা লগ্ন থেকেই আলাদা হয়ে পড়ে। ভৌগলিক ভাবে আলাদা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সব সময়ই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নিয়ন্ত্রন করতো। তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মতামত, ন্যায্য অধিকার খর্ব করে নিজেদের শাসন-শোষণ পাকাপোক্ত করতেই কাজ করেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা বাঙালি কখনোই পরাভব, পরাধীনতা মেনে নেয়নি। তাই পাকিস্তান সৃষ্টির ঊষা লগ্ন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একটি স্বাধীন স্বদেশের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সে স্বপ্ন দিন দিন নব চেতনায় উজ্জিবিত হয়। তলে তলে বাঙালিরা সুসংগঠিত হতে থাকে। অবশেষে সত্তরের নির্বাচনে বাঙালিরা ব্যালটের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিরঙ্কুস রায় প্রদান করেন। কিন্তু পূর্বের মতই পশ্চিমা শাসকরা জনরায় প্রত্যাখান করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। তারা জনগণের মনোনিত নেতা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা প্রদান করতে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। এতে করে স্বাধীন চেতা বাঙালিরা ফুসে উঠে। ফুসে ওঠা বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা আরো সুদীপ্ত ও শানিত করে তুলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর আহবানে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা হয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাঙালির মহান স্বাধীনতা।

কিন্তু স্বাধীনতার সুখ যথাযথ ভাবে বাঙালির কপালে জুটেনি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে দীর্ঘ একুশ বছর দেশকে পাকিস্তানের কলোনীতে পরিনত করে। দীর্ঘ একুশ বছর জাতির জনকের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে পরাজিত শক্তির কবল থেকে বাংলা-বাঙালিকে মুক্ত করেন। সে সুখও বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০০১ সালে পরাজিত শক্তি পুনরায় দেশকে, স্বাধীনতাকে, পতাকাকে খামছে ধরে।

অবশেষে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহা সড়কে ধাবমান হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুখ উপভোগ করছে। স্বাধীনতার সুখ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশাই করি।

Facebook Comments

About T. M. Golam Mostafa

Check Also

সম্পাদকীয়

করোনা মোকাবেলায় চলতি বাজেট কার্যকরী ভূমিকা রাখবে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদে পেশ …

কপি না করার জন্য ধন্যবাদ।