সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠিত হোক
টি. এম গোলাম মোস্তফা
স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে আমাদের অর্জন আকাশচুম্বী। এত অর্জনের পরও কিছু কিছু ব্যর্থতা সত্যিই দুঃখজনক। যেমন স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারিনি। এমনকি নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন করতেও পারিনি। এ না পারার কারণে যত ভালো নির্বাচনই হোক কেউ না কেউ তাতে কালিমা লেপন করেছে। বিতর্কিত করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যে কটি নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে তার কোনটিই বিতর্কমুক্ত ছিলোনা।
অথচ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সব সময়ই কোননা কোন দল অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেনি। যেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হোক তারা যদি তাদের অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষ ভাবে পালন করতে পারতো তাহলে বিতর্ক এতটা দানা বেঁধে উঠতে পারতো না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নির্বাচন কমিশনই সবচেয়ে বিতর্কিত। বিতর্ক তারাই টেনে আনেন। তারা যদি দল কানা না হয়ে নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের অর্পিত ক্ষমতা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করেন তা হলে কোন বিতর্ক থাকেনা।
যে দল যখন ক্ষতায় থাকে সে দলের অনুগতদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। ফলে নির্বাচন যত অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষই হোকনা কেন বিরোধীরা তা গ্রহণ করেনা।গ্রহণ না করারও যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সদস্যদের সব সময় দলবাজি করতে। তারা তাদের অর্পিত দায়িত্ব, ক্ষমতা ভুলে শাসকদলে তল্লীবাহকের ভূমিকা পালন করেন। এ অবস্থার কারণে আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলে গণতন্ত্র হুমকীর মুখে পতিত হয়।
উচিৎ ছিল দল, মত নির্বিশেষে সবাই এক টেবিলে বসে আন্তরিক পরিবেশে আলাপ আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন আইনটি প্রণয়ন করা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর সকলের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কশিন গঠন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণীত হয়েছে। এ আইনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে এ আইনে গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা সময়ই বলে দেবে।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন হয়েছে। কিন্তু যেভাবে আইনটি প্রণীত হলে সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পেত সেভাবে আইনটি প্রণীত হয়নি। এতে শাসকদলের ইচ্ছার প্রতিফলন রয়েছে। এমনকি এতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের নূন্মতম সুযোগটুকু রাখা হয়নি। কারো সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। সকলকে অন্ধকারে রেখে অচমকা একটি আইন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। উক্ত আইনে আমলাদের সর্ব ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের বাদ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে সার্চ কমিটিতে যাদের নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাধ্যমে সার্চকৃত নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে মনে হয়না। এটা আইনের জন্য আইন।
তবুও আশাবাদী থাকতে চাই। অন্তত একটা আইন হয়েছেেএ সুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চাই। সে সাথে নতুন আইনে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে শত ভাগ না হলেও অন্তত পঞ্চাশ ভাগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার দরকার। তা নাহলে নতুন এ আইন অকার্যকর হয়েযাবে।সন্দেহ থেকেই যাবে। বিধায় সার্চ কমিটিতে বিষয়টি ভেবে এগুতে হবে।
Facebook Comments