ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

আজকের শরীয়তপুর প্রতিবেদক :

শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মহাপরিচালক বরাবর উপজেলার ২২জন প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সুলতানা রাজিয়া ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। এসব টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে গড়মিল হওয়ায় পর পর দুইজন অফিস সহকারী খন্দকার আবু সালেহ মোঃ কামাল ও হিসাব সহকারী মোঃ লিখনকে তদবির করে অন্যত্র বদলী করে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। এছাড়া রুটিন মেরামতের জন্য ৮৮ টি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার টাকা করে, ১শ’ ৫০ টি বিদ্যালয়ে স্লীপ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে এবং ৯৯টি বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক বাবদ ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব বরাদ্দের বিল ভাউচার পাশ করাতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া নির্ধারিত হারে টাকা দাবি করেন। তিনি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি স্কুল থেকে ৫ হাজার টাকা করে, ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি স্কুল থেকে ৪শ’ টাকা করে, স্লীপের বরাদ্দের প্রতিটি স্কুল থেকে ৮শ’ টাকা এবং ওয়াশ-ব্লক থেকে ৫শ’ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করেন। সদ্য বদলী হওয়া হিসাব সহকারী লিখন মিয়ার কাছে নির্ধারিত হারে টাকা দিয়ে প্রতিটি স্কুলের বিল ভাউচার পাশ করাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। এভাবে তিনি প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১শ’ ৪৮টি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত, রিপিয়ারিং, স্লীপ ও ওয়াশব্লকের বরাদ্দ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মাঝে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাজিয়া সুলতানা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তার অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলতে শিক্ষকরা সাহস পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। শিক্ষা অফিসারের এসব কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে উপজেলার ৩ নং রামভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল হক সুজল, প্রধান শিক্ষক মোঃ মহসীন উজ্জামান, মোঃ অলিউল্লাহ বেপারী, মোঃ মনিরুল ইসলাম, আলমগীর মিয়া, মুহাম্মদ আলমগীর, মোঃ রেজাউল করিমসহ ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ সম্প্রতি মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সম্প্রতি বদলী হওয়া হিসাব সহকারী লিখন মিয়া বর্তমানে গোসাইরহাট উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইতো একমত হয়েই টাকা উত্তোলন করেছে। আমার কোন দোষ নেই।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া মুঠোফোনে বলেন, এসব বিষয় সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিল শিক্ষকরা। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments

About T. M. Golam Mostafa

Check Also

ডামুড্যা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

আজকের শরীয়তপুর প্রতিবেদক: আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে শরীয়তপুরের ডামুড্যাতে বুধবার ৩০ নভেম্বর বিকালে …

কপি না করার জন্য ধন্যবাদ।