সম্পাদকীয়

কোভিড ১৯ প্রতিরোধে কার্যকরী লকডাউন চাই

বৈশ্বয়িক সমস্যা কোভিড-১৯ প্রথম ও প্রধান হাাতিয়ার হলো লকডাউন। একমাত্র লকডাউনের মাধ্যমেই যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সম্ভব তার প্রমাণ বিশ্বের সকল জাতি ও রাষ্ট্রের নিকট আছে। আমাদের দেশেও লকডাউনের মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নিম্নগামী হয়েছে তা আমরা একাধিকবার দেখেছি। কিন্তু কথা হলো আমরা লকডাউন কতটুকু কার্যকর করতে পেরেছি ? লকডাউনের নামে যা হয়েছে তাকে তামাশা ছাড়া অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই। যদি সত্যিকার কার্যকরী লকডাউন করা যেত তাহলে দেশ অনেক আগেই কোভিড-১৯ মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে চমক দেখাতে পারতো। নামে মাত্র লকডাউনেই যদি কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর হার অতিদ্রুত নিম্নগামী হতে পারে তা হলে কার্যকরী লকডাউনে কী হতে পারতো তা যে কোন ব্যক্তিই অনুধাবন করতে পারবে।

ইতোমধ্যে লকডাউনের নামে আমরা যা দেখেছি তাতে হতাশ ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। এখনও দেশে লকডাউন চলছে। সে সাথে চলছে কল-কারখানা, হোটেল-রেস্তোরা, গণ পরিবহন, হাট-বাজার ও অফিস আদালত শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সারা দেশের সকল সরকারি, বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যথারিতি চলছে। একসাথে পশ্চিম সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ইতোমধ্যে দেশে ঢুকে গেছে। এই ভেরিয়েন্টের সমস্যা হলো এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর ছড়িয়ে পড়ার হার ১ জন থেকে ২০ জন; ২০ জন থেকে ১০০ জন যা আমাদের দেশের মত জনসংখ্যাধিক্য জনপদের চরম হুমকি। সারাদেশে এ ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে তা ঠেকানো সম্ভব হবে না। কারণ কোভিড মোকাবেলায় আমরা যে বিশৃঙ্খলা দেখেছি তা অবর্ণনীয়।

শুধু মাস্ক পরিধান করলে ৯০ ভাগ করোনা প্রতিরোধ বলে বিষেজ্ঞরা মতামত দিয়েছে। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় যে, আমরা জনগণের মাস্ক পড়া ও হাত ধোয়ার কাজটি নিশ্চিত করতে পারিনি।আমাদের দেশে শুধু অনেক সুন্দর-সুন্দর আইন আছে যা কার্যকর করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। শুধু আইন প্রনোয়ণ ও তা কার্যকরের ঘোষণা করেই আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাঠ পর্যায়ে আমরা কোন কিছুই কার্যকর করতে পারছি না। এ ব্যর্থতার জন্য আমরা সকলেই কম বেশি দায়ী। প্রথমত দায়ী নীতিনির্ধারক ও পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা। দ্বিতীয়ত দায়ী জনগণ। নীতিনির্ধারকরা একক ভাবে শুধু গুটি কয়েক প্রশাসনিক লোকজন দিয়ে সব কিছু কার্যকর করতে চাচ্ছেন। আর জনগণ এ সুযোগে বেপরোয়া ভাবে আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ভঙ্গের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। ফলে কোন কিছুর সুফল আমরা পাচ্ছি না ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরেও। এতে করে আমরা যতটুকু আগাই তারচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ি। তাই সরকারের উচিৎ গুটি কয়েক প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপর নির্ভর না করে সকল শ্রেণি পেশায় লোকদের একত্রিত করে বৈশ^য়িক সমস্যা করোনা মোকবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কে খুশি হলো কে অখুশি হলো তা না ভেবে করোনা মোকবেলা কারিগরি কমিটির পরামর্শ মোতাবেক যা যা করণীয় তা শতভাগ নিশ্চিত করে কার্যকরী লকডাউন সহ অন্যান্য সকল কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ। আর জনগণের উচিৎ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকারের সকল সিদ্ধান্তের উপর শ্রদ্ধাশীল হওয়া। এটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের এ জনপদ থেকে করোনা কোভিড-১৯ অচিরেই বিদায় হবে।

Facebook Comments

About T. M. Golam Mostafa

Check Also

সম্পাদকীয়

ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার বাংলা-বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্ন আশা …

কপি না করার জন্য ধন্যবাদ।