শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক
বৈশ্বয়িক বিপর্যয় কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের কওমী বাদে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আমাদের দেশে কোভিড-১৯ ধরা পরার সাথে সাথেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীজন ও বিশেষজ্ঞদের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির ঘোষণা করেন। ছুটির মেয়াদ বাড়তে বাড়তে ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকার পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি। পিএসসি, জেএসসি/জেডএসসি, এসএসসি/দাখিল ও এইচএসসি/সমমান পর্যায়ে অটোপাস দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অটোপাসে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সচেতন মহল কেউ খুশি হতে পারেনি। শ্রেণি কক্ষে পাঠদান দীর্ঘদিন বন্ধ। বিকল্প ভার্চুয়াল পাঠদান কাজির গরু কেতাবে থাকার মত। শহর এলাকার শিক্ষার্থীরা সীমিত আকারে এ সুযোগ পেলেও পল্লী এলাকার শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ তেমন একটা পায়নি। আমাদের দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপক হলেও স্মার্টফোন সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে অনেকেই জানেন না। শুধু অডিও, ভিডিও,গান-বাজনা ও বিতর্কিত ছবি প্রদর্শন ছাড়া অন্যকোন কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার হচ্ছে না বলেই মনে করা যায়। এর উপর ইন্টারনেট সংযোগ, ইন্টারনেট গতি এবং ইন্টারনেটের অধিক মূল্যতো রয়েছেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অভিজ্ঞ নয়। ফলে এ উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। এ উদ্যোগকে সফল করার জন্য যা দরকার ছিলো সংশ্লিষ্টরা তা’ও করতে পারেনি। শুধু ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প সংশ্লিষ্টরা নিতে ব্যর্র্থ হয়েছে।
একটু উদ্যোগী হলে শেণি কক্ষেই পাঠদান সম্ভব করা যেত। প্রতিটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ছিলো। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ১ টি শ্রেণির পাঠ দাান নিরাপদ দুরুত্বে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা যেত। একই পদ্ধতিতে পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়িয়ে পরীক্ষা নেয়া যেত।
তা ছাড়া কোভিড আক্রন্তের হার কম বয়সীদের সংখ্যা নগন্য। ৪০ বছর বয়সের নীচে যেখানে ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি সেখানে এর অর্ধেক বয়সের শিক্ষার্থীদের ঘরে বসিয়ে রাখা যুক্তি ধোঁপে টেকার নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি রয়েছে। দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছু খোলা রয়েছে। নাম মাত্র লকডাউন কোন কাজে আসছেনা। দেশে সব কিছু হচ্ছে। সীমিত আকারে জনসভা হচ্ছে। হাট খোলা, বাজার খোলা, কিছু কিছু সময়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখে অন্যান্য ছোট পরিবহন চালানো হচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। মানানোর ব্যবস্থাও দেখছিনা। সারাদেশ ওপেন সিক্রেট।
এ অবস্থায় কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের স্বপ্ন কতটুকু যথার্থ ভেবে দেখতে হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কথাও ভাবতে হবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলা করেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তা না করলে দেশ মেধা শূন্য হতে সময় লাগবে না। শিক্ষাকে উপক্ষো করে উন্নয়ন অগ্রগতির চিন্তা অলীক। যথার্থ পরিকল্পনা করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরীভাবে নেয়া দরকার।
Facebook Comments